খাদ্যগুদামের সামান্য কুলি এখন কোটিপতি! হ্যাঁ এমন ঘটনা ঘটেছে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায়। তার রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়িসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ! আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ে উপজেলা খাদ্যগুদামকেন্দ্রিক সিন্ডিকেট গড়ে তুলে এমন বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের রাজগুরু গ্রামের দিনমজুর মৃত মধু খানের ছেলে সেন্টু খান। বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, আট বছর আগে একমুঠো আহারের সন্ধানে উপজেলা খাদ্যগুদামের পণ্য ওঠানামার কাজে দৈনিক সরকারি নিয়মে ১৫০ টাকা মজুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। নিজের নামে ইজারা না থাকলেও অন্যের ইজারায় শ্রমিক সর্দার পরিচয়ে খাদ্যগুদামের আশা সরকারি খাদ্যশস্য ওঠা-নামার কাজে নিয়োজিত হন।
এরপর ধীরে ধীরে উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে গোপনে বিভিন্ন সময় সরকারি চাল, গম ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এভাবেই কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তোলেন তিনি।
আর এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে সম্প্রতি বাবুগঞ্জের কেদারপুর ইউপি চেয়ারম্যান নূরে আলম বেপারীর কাছ থেকে সরকারি বরাদ্দ চাল কেনার তথ্য থেকে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের অভিযানে এ তথ্যের সত্যতা পেয়ে বরিশালের র্যাব-৮-এর ডিএডি এ কে এম আবু হোসেন শাহরিয়ার বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪এর ২৫(১)/২৫-ডি আইনে সেন্টু খানসহ চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে সেন্টু পলাতক রয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, খাদ্যগুদামের কুলির আড়ালে অবৈধভাবে চাল-গম ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে আট বছরে রাজগুরু গ্রামে তিনি তৈরি করছেন আধুনিক কারুকাজের দোতলা পাকা বাড়ি, নিজে ব্যবহার করছেন দুটি দামি মোটরসাইকেল,রয়েছে পণ্যবাহী ট্রাক, একই এলাকায় রয়েছে নির্মাণাধীন পাঁচতলা বাড়ি, পাঁচরাস্তা নামক স্থানে রয়েছে নির্মাণাধীন মার্কেট, আট বছরে রহমতপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ক্রয় করেছেন কোটি টাকা মূল্যের জমি, রয়েছে ব্যাংকের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের তথ্য, নিজ ঘরে নগদ টাকা নিরাপদে রাখার জন্য রক্ষিত আছে দামি সিন্দুক। এত অর্থ-বৈভবের মালিক বনে যাওয়ায় একসময় নেতাদের বদৌলতে হয়ে গেছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতার পরিচয়ে গত ১ জানুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কৃষকদের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান কেনার নামে সিন্ডিকেট করে অভিযুক্ত সেন্টু একাই চার শ মেট্রিক টন ধান কিনে খাদ্যগুদামে সরবরাহের মাধ্যমে অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন ১০ লক্ষাধিক টাকা।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সেন্টু খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর মোবাইল বন্ধ থাকলে তা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের উপজেলা সভাপতি কাজী ইমদাদুল হক দুলাল বলেন, ‘সরকারি চাল চুরির ব্যাপারে সরকার জিরো টলারেন্স। সেন্টু খানের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে জেনেছি। অভিযোগের বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।